Bengal Chronicle

ইংরাজী সাহিত্যের চার মহারথীর অঙ্গনে – প্রথম পর্ব –  উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর বাড়ী

ওয়ার্ডসওয়ার্থ

প্রথম পর্ব –  উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর বাড়ী | ডাভ কটেজ, টাউন এন্ড, গ্রাসমেয়ার, লেক ডি্র্স্টিকট, ইংল্যন্ড।

ইংরেজী সাহিত্যে যাঁরা রোমান্টিসিজমের চর্চা করেছেন তাঁদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে অবস্থান করছেন কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে পিতৃমাতৃহীন হবার পর, সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে প্রকৃতপক্ষেই ভিখারী বাউন্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়ান পরবর্ত্তী বারো বছর ধরে। ১৭৯৫ সালে তাঁর ২৫ বছর বয়সে বোন ডরোথির সাথে পুনরায় যোগাযোগ ঘটলে অবস্থার কিছুটা উন্নতী হয়। এরপর ডিসেম্বর ১৭৯৯ এ ডরোথিকে নিয়ে লেক ডিস্ট্রিক্টের গ্রাসমেয়ারে এসে ডাভ কটেজে  ওঠেন, এবং এই বাড়িতেই মে ১৮০৮ অবধি খুবই সাধারনভাবে বসবাস করতে থাকেন। এর মধ্যেই তিনি ইংরাজী সাহিত্য রসিকদের বেশ কিছু অনবদ্য কবিতার ভান্ডার উপহার দেন।

পরবর্তিতে, তাঁর এই দোতলা বাড়ী ”ডাভ কটেজ” ১৮৯০ সালে ”ওয়ার্ডসওটার্থ ট্রাস্ট” অধিগ্রহণ করেন এবং ওটার্ডসওয়ার্থ এর থাকার সময় এটি ঠিক যেমন ছিল, যথাসম্ভব সেভাবেই সাজিয়ে রেখে ১৮৯১ সালে এটিকে অনুরাগী দর্শক জনসাধারনের নিকট প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।

আমরা ওয়েলস ভ্রমন শেষ করে, লেক ডিসট্রক্ট এর উইন্ডারমেয়ার লেক এর পাশ দিয়ে কয়েক মাইল এগিয়ে গিয়ে পৌঁছলাম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর বাড়ী ডাভ কটেজের সামনে। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ট্রাস্টের তরফে এই ডাভ কটেজ ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য তাঁরা এক গাইডেড টুরের ব্যবস্থা রেখেছেন, যেখানে ওযার্ডসওয়ার্থের উত্তরসুরি পরিবারের এক মহিলা সদস্যা এর ভেতরের সমস্ত কিছু ঘুরিয়ে দেখান এবং সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ বর্ণন করে বুঝিয়ে দেন। আমরা টিকিট কেটে আমাদের মত আরো জনা বারো দর্শকের সঙ্গে ভিতরে ঢুকলাম। তিনি সব ঘুরিয়ে দেখালেন এবং বুঝিয়ে বললেন কবির বসার ঘর, লেখার ঘর, শোবার ঘর, ডরোথির ঘর, সব কিছু দোতলায়। দেখলাম সেই লেখার ঘর আর সেই সব টেবিল চেয়ার, যেখানে বসে কবি রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত সব কবিতা, যেমন ”ওড : ইন্টিমেসনস অফ ইমমরালিটি”, ”ওড টু ডিউটি”, ”মাই হার্ট লিপস আপ”, ”আই ওয়ানডারড লোনলি অ্যাস এ ক্লাউড”, যা ”ড্যাফোডিলস” নামেও পরিচিত। একটি ঘরে রাখা আছে ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর ব্যবহৃত ব্যক্তিগত নানা জিনিষপত্র, কাপ, ডিস, চশমা, ছড়ি, ইত্যাদি। আরও আছে তাঁর বন্ধুদের ও গুনমুগ্ধদের দেওয়া নানান মেনেন্টো। এখানে থাকাকালিনই তাঁর পরিচয় হয় আর এক বিখ্যাত ইংরাজ কবি স্যামুয়েল টেলর কোলরিজ এর সঙ্গে, যা ক্রমে গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। তাঁর সঙ্গে মিলে তিনি ১৭৯৮ সালে যৌথভাবে লেখেন ”লিরিক্যাল বালাডস” যাকে ইংরাজী সাহিত্যের রোমানটিক আন্দোলনের সুচনা হিসাবে ধরা হয়। এছাড়া তাঁর আত্মজীবনী মুলক মহাকাব্য ”দ্য প্রিলুড” এর লেখার সূচনা তিনি এখানে বসেই করেন, যদিও সেটি তাঁর জীবদ্দশায় ছাপানো হয়ে ওঠেনি, তাঁর মৃত্যুর পর তা ছাপা হয়।   সিড়ি দিয়ে নেমে এক তলায় রান্নাঘর, তার এক পাসে বসার ঘরে ফায়ারপ্লেস। পাস দিয়ে বেরিয়েই বাগানে যাবার রাস্তা। আমরা এই বাড়ীর সামনের দিক দিয়ে ঢুকে সারা বাড়ীটির একতলা ও দোতলা পরিক্রমা করে পিছন দিক দিয়ে বার হয়ে পৌঁছলাম ডরোথি ও ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর তৈরি করা বাগানে। চার পাসে ছোট বড় নানা রকমের ফুলের গাছের ডালে ফুলেরা হাওয়ার তালে তালে মাথা দোলাচ্ছে। একপাশে রয়েছে সেই বিখ্যাত ড্যাফোডিল ফুলের গাছ, আর তার পাশেই রয়েছে এক সাদামাটা বেন্চি। ১৮০৪ সালের এক দুপুরে এই বেন্চিতে বসেই ড্যাফোডিল গাছের ডগায় ফুলেদের দোল খাওয়া দেখতে

দেখতে অনুপ্রেরিত হয়েই ওয়ার্ডওয়ার্থ লেখেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা ”ড্যাফোডিলস”। বাড়ীর লনের একদিকটা টিলার মত উঠে গেছে প্রায় পনের ফুট মত ওপরে। রয়েছে ওপরে ওঠার বেশ সরু এবং উচু উচু পাথুরে ধাপের সিড়ি। ওপরে উঠেই দেখা গেল এক নোটিস, লেখা ”ওয়ার্ডসওয়ার্থ স্টেপ”, সাবধানে ওঠানামা করুন। এই সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করে, নিচের বেন্চিতে বসে আর বাগানের এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে আমরা দেখলাম চার পাশটা, ঠিক যেমনি করে ঘোরাফেরা করে কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ ইংরাজী সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ অনেক কবিতা আমাদের উপহার দিয়েছেন, যা আজও অমর হয়ে রয়েছে।

তাঁর বাড়ী থেকে বেরিয়ে পাশেই রয়েছে ”ওয়ার্ডসওয়ার্থ মিউজিয়াম”। এটি ১৯৪৩ সালে অন্যত্র স্থাপিত হয় এবং ১৯৮১ সালে বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয়। তাঁর জীবনের বিভিন্ন সময়ের নানান স্মরনিকা সামগ্রি এখানে সযত্নে রক্ষিত হয়েছে, যা দেখে জীবনযাপন কেমন ছিল তার একটা সম্যক ধারনা করা যায়। এখানেই বিক্রি হচ্ছে ব্যক্তিগত সংগ্রহের নানা রকমের মেনেন্টো, পিকচার পোষ্টকার্ড, ম্যাগনেট ইত্যাদি, যা কিনে দর্শকেরা তাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখতে পারবে।

ছবি : প্রকাশ চট্টোপাধ্যায়

Exit mobile version