Bengal Chronicle

আন্দামানের নীলদ্বীপের পরিক্রমা (পর্ব ২)

আন্দামানের নীলদীপ

কোলকাতার জন-অরণ্যর বাইরে কটা দিন কাটাবো বলে নয়(আমি জন-অরণ্য ভালোবাসি) আন্দামান এর কথা ছোটবেলা থেকে পাঠ্যপুস্তক থেকে ও মায়ের বকাঝকা তে এতো শুনেছি যে মনে অনেক দিন ধরে এখানে আসার বাসনা ছিল।লন্ডনের সেকেন্ডারি স্কুলগুলোর লম্বা ছুটি হয় সামার হলিডে তে আর ওদের গ্রীষ্মের ছুটি আমাদের দেশের বর্ষাকাল।স্কুল টিচার হিসেবে ওই সময় ছাড়া দেশে আসার কোনো যুক্তি ছিলোনা।বাবা-মা ছাড়া আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করতে দেড় মাস লেগে যেতো। তখন যতবার আন্দামান যাবার প্লান করতাম,  দেখতাম আবোহাওয়া তেমন সুবিধাজনক নয়। তাই  যাওয়া হয়ে উঠতে না। সেই এবারে ডিসেম্বরে এসেও আন্দামানের দুরূহ আবহাওয়ার দাপটের মধ্যে পড়লাম।

মজার ব্যাপার হল যে এই ঝড়ের আবহাওয়ার কথাটা আমরা বুঝতেই পারিনি ও তার ভয়াবহ প্রভাব বুঝতেই পারিনি। তার কারণ ঠিক ঝড়-ঘূর্ণি যখন থেমেছে তারপর আমরা আন্দামানে ল্যান্ড করেছি এবং Thomas Cook travel company র হাতে আন্দামানের সমস্ত টুরের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলাম বলেও কিছুই তেমন ভয়াবহ ঘটেছে বলে বুঝতেই পারিনি। শুধুমাত্র যখন হোটেলের রিসেপশানে ইন্টারনেট কানেকশন না পাওয়ার নালিশ করলাম তখন ওরা বললো তিন দিন ধরে ঝড়ের জন্য কানেকশন নেই। তবে ঝড়ের গাম্ভীর্যটা তখনও মগজে ঢোকেনি।

নীলদ্বীপ এ এসে একেবারে পুরোপুরি টিভি ছাড়া আর কোন বাহির জগৎের সাথে সংস্পর্শ নেই কিন্তু বিনা খরচে যদি হলিউডের নামকরা অভিনেতা রিচার্ড গিয়ার মতন অভিজ্ঞতা অযাচিত ভাবে পাই তার চেয়ে বড় পাওনা কি হতে পারে? শুনেছি শুধু উনি নয় অনেক নামী -দামী লোকজন বছরে এক মাস করে আমেরিকার এক বৌদ্ধ মঠে গিয়ে সমস্ত রকমের সাংসারিক জীবনের যাবতীয় কার্যকলাপের থেকে দুরে থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেডিটেশান করে সময় কাটান। 

আমি যতই বিপরীত পরিস্থিতি বা আবোহাওয়ার মধ্যে পড়ি একটা কিছু ভালো খুঁজে ও পেয়ে যাই। অবশ্য আমি সেই দৃষ্টি নিয়ে দেখি বা দেখতে বাধ্য হই সেটা বলতে পারবোনা। নীলদ্বীপ এর এই অভিজ্ঞতা আমাকে কিন্তু ক্ষনিকের জন্যে হলেও একটু দার্শনিক করেছিলো।🤭তবে নীল দ্বীপের দুরকমের জীবন্ত কোরাল / পলা বানানো ব্রিজ যার নাম এখানকার বাঙালি বাসিন্দারা হাওড়া ব্রিজ দিয়েছেন। এর কাছে দাঁড়িয়ে অন্যান্য টুরিস্টদের মতন ছবি তোলার লোভ আর সামলাতে পারলাম না। তাছাড়া এদিক ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কোরাল/পলা ও কোরালের সৃষ্টিকর্তা/সৃষ্টিকত্রি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল এই নীল দ্বীপের  সমুদ্র সৈকতে এসে। যতই হেথায়- সেথায় পড়ে থাকুক এই পলা বা কোরালগুলো, একটি বিন্দুমাত্র সুভেনিয়ার ভাবেও আনতে গেলে শুধুমাত্র অপরাধী সাব্যস্তই হতে হবে না  বরং প্রচুর টাকা জরিমানা ও দিতে হবে।

বিকেল পাঁচটা পর ওখানে থাকা নিষেধ তারপর  নাকি সমুদ্রের ঢেউ ভয়াবহ ভাবে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে। তাই  আমরা  পাতাতাড়ি গুছিয়ে রওনা দিলাম Thomas Cook এর গাড়ি করে আমাদের গন্তব্য হোটেলের পথে।একটা মিষ্টি স্মৃতির কথা না বলে এই লেখাটার ইতি টানতে মন চাইছে না। সেটা সবুজ দ্বীপের মানে আন্দামানের ভ্রমনকালে জানতে পারিনি তবে অনেক পরে ফেসবুকের দেওয়ালে এসে দেখে মনে -মনে পুলকিত হয়েছিলাম সেটা অস্বীকার করতে পারছিনা। সেটা হোল অনেক ফেসবুক বন্ধুরা আমাদের আন্দামানের ঝড়-দুর্যোগের মধ্যে থাকার জন্য রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ।

মুখ্য ছবি : সোমচাই

অন্যান্য ছবিগুলো সুভাষ দের তোলা।

পর্ব ১ : আন্দামানের সেলুলার জেলের পরিক্রমা

Exit mobile version